এসএসসি পাসে কনস্টেবল নিয়োগ

 

এসএসসি পাসে কনস্টেবল নিয়োগ



সারা দেশ থেকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ পুলিশ। জিপিএ ২.৫ পাওয়া এসএসসি বা সমমানের পুরুষ ও নারী প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাবেন। অনলাইনে আবেদন করতে হবে ২৪ জুলাই ২০২৫ এর মধ্যে। বাছাই প্রক্রিয়া, পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রস্তুতিসহ বিস্তারিত জানাচ্ছেন রাকিবুল ইসলাম

খেয়াল রাখুন

প্রার্থী বাছাই হবে শারীরিক মাপ, সক্ষমতা যাচাই, লিখিত পরীক্ষা, স্বাস্থ্যসহ কয়েক ধাপের পরীক্ষা ও যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অনলাইনে আবেদনের সময় ট্রেকিং নম্বর ও আবেদনের রঙিন প্রিন্ট সংরক্ষণ (প্রিন্ট) করে রাখুন। বাছাই পরীক্ষার দিন নির্ধারিত কেন্দ্রে সময়মতো উপস্থিত থাকতে হবে। দরকারি পোশাকও সঙ্গে রাখতে হবে।

লিখিত পরীক্ষার জন্য ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পাঠ্যবই পড়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কেও জানাশোনা থাকতে হবে। এর জন্য নিয়মিত পত্রিকার পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের বইও পড়তে হবে।

বাছাই পদ্ধতি ও পরীক্ষা

প্রার্থী বাছাই হবে বেশ কয়েকটি ধাপে।

প্রথমেই নেওয়া হবে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং টেস্ট। পর্যায়ক্রমে নেওয়া হবে শারীরিক মাপ, কাগজপত্র যাচাই ও ফিজিক্যাল এনডোরেন্স বা পিইটি পরীক্ষা। এরপর প্রার্থীদের ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৫ নম্বরের ভাইভা ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

পরীক্ষার ফল অনুসারে মেধাক্রম ও সরকারের প্রযোজ্য নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে এসব প্রার্থীর মধ্য থেকে চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। চূড়ান্তভাবে বাছাই করা প্রার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

বিগত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্রে দেখা গেছে, লিখিত পরীক্ষা হয়েছে রচনামূলক পদ্ধতিতে ৪৫ নম্বরে।

সময় দেড় ঘণ্টা। এই পরীক্ষার প্রশ্ন হয় মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ের ওপর। সাধারণত বাংলায় ১৫, ইংরেজিতে ১৫ এবং গণিত ও সাধারণ জ্ঞানে ১৫ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। বাংলায় রিপরীত শব্দ, বাক্য রচনা ও বাগধারা, সমোচ্চারিত শব্দ, সন্ধিবিচ্ছেদ, রচনা, প্রবাদ-প্রবচনের ওপর প্রশ্ন থাকতে পারে। এর বাইরে পত্রলিখন/দরখাস্ত অথবা ভাবসম্প্রসারণও আসতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ রচনা ও ব্যাকরণের উল্লিখিত অধ্যায়গুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন, আর্টিকল, প্যারাগ্রাফ, ফিল ইন দ্য ব্ল্যাংকস, প্রিপজিশন অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া লেটার রাইটিংয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। ইংরেজির এই অংশ বা অধ্যায়গুলোতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। গণিতের পাটিগণিতের শতকরা, ঐকিক, সুদকষা এবং বীজগণিতের উৎপাদকের বিশ্লেষণ, সেট অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। তাই পাটিগণিত ও বীজগণিতের সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোতে প্রস্তুতি নিতে হবে। সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর ‘এককথায়’ প্রশ্ন থাকতে পারে। এই অংশে ভালো করতে হলে সমসাময়িক সংবাদ, তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে জানাশোনা থাকতে হবে। টিআরসি পদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার তুলনায় সহজ করা হয়। প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো অনলাইন থেকে দেখে নিন। তবে ভালো প্রস্তুতির জন্য প্রস্তুতিমূলক সহায়ক বই সংগ্রহ করতে পারেন। এসব বইয়ে বিগত প্রশ্নপত্র (উত্তরসহ), সাজেশন ও বিষয়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ টপিকস গোছানো থাকে।

বাছাই পরীক্ষায় সঙ্গে রাখবেন

বাছাই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সময় প্রার্থীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। শারীরিক পরীক্ষার (ফিজিক্যাল টেস্ট) সময় প্রবেশপত্রের ডাউনলোডকৃত দুই কপি, শিক্ষাগত যোগ্যতা পরীক্ষার মূল বা সাময়িক সনদ, সর্ব শেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক চারিত্রিক সনদের মূল কপি, স্থায়ী নাগরিকত্ব সনদের মূল কপি, অভিভাবকের সম্মতিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি, সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তার সত্যায়িত তিন কপি পাসেপোর্ট আকারের ছবি, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সনদ, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের মূল কপি, তৃতীয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে সিভিল সার্জন কর্তৃক সনদ এবং চাকরিজীবী প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় সনদ দেখাতে হবে।

প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা

নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) হিসেবে ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ চলাকালে বিনামূল্যে পোশাক, থাকা-খাওয়াসহ মাসিক প্রশিক্ষণ ভাতা দেওয়া হবে। সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করলে শিক্ষানবিশ কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষানবিশ কনস্টেবল পদধারীদের বেতন জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী ১৭তম গ্রেডে ৯,০০০-২১,৮০০ টাকা। ন্যূনতম দুই বছর শিক্ষানবিশ কনস্টেবল হিসেবে চাকরির পর কনস্টেবল পদে চাকরি স্থায়ী করা হবে। কনস্টেবল পদের কর্মীরা বেতনের পাশাপাশি বিনামূল্যে পোশাক, ঝুঁকিভাতা, বাসস্থান, খাওয়া ও চিকিৎসা ভাতা পাবেন। এ ছাড়া থাকছে স্বল্পমূল্যে পারিবারিক রেশন সুবিধা, পদোন্নতি ও জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে কাজের সুযোগ। চাকরি থেকে অবসরের পর যথারীতি পেনশন সুবিধাও পাবেন।

 
সুযোগ যাঁদের

এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ অন্তত ২.৫০ থাকলেই আবেদন করা যাবে। প্রার্থীদের জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক (পুরুষ অথবা মহিলা) এবং অবিবাহিত হতে হবে। পুরুষ প্রার্থীদের বেলায় মেধা কোটার ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। মুক্তিযোদ্বা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ক্ষেত্রে প্রার্থীর উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। বুকের মাপ—মেধা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি, সম্প্রসারণে ৩২ ইঞ্চি। মুক্তিযোদ্বা কোটার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি, সম্প্রসারণে ৩১ ইঞ্চি। মহিলা প্রার্থীদের বেলায় মেধা কোটার ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটার ক্ষেত্রে উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুসারে এবং চোখের দৃষ্টি ৬/৬। ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ২০ বছর।








Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url